‘গার্মেন্টস এক্সেসরিজে বিনিয়োগ ৩০ হাজার কোটি’ Garment accessories investment

 



সাক্ষাতকার প্রতিবেদনটি অর্থসূচক থেকে সংগৃহীত: তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত। দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে এই খাত থেকে। দেশের প্রধান এই রপ্তানি শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখে আসছে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ। তৈরি পোশাক শিল্পে অবদানের পাশাপাশি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্য; বাড়ছে বাজার।

গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি অর্থসূচকের সঙ্গে কথা বলেছেন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আব্দুল কাদের খান। মেহেদী হাসানের নেওয়া সাক্ষাৎকারটির কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।

অর্থসূচক: গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন?
আব্দুল কাদের খান: দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উপর ভিত্তি করেই গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প গড়ে উঠেছে। পোশাক কারখানায় যখন প্রথম অর্ডার আসে। সঙ্গে সঙ্গে ওই কারখানা ফেব্রিক্স সংগ্রহ করে। পরে সেটাকে বায়ারদের পছন্দসই করার জন্য যে সব এক্সেসরিজ প্রয়োজন, তার পুরোটাই আমরা সরবরাহ করি। কারখানায় পোশাক তৈরির পর সেটাকে আকর্ষণীয় করে তোলার কাজটা আমাদেরকে করতে হয়। গার্মেন্টসের বাইরে আমরা আরও কিছু কাজ করি। এখন চামড়াজাত পণ্য, ক্রোকারিজ, হিমায়িত খাদ্য, সবজি এবং ফল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। সেগুলোর প্যাকেজিংও আমরা করি। ওষুধ শিল্পের প্যাকেজিংও আমরা করে থাকি। গার্মেন্টস এবং এর বাইরে সব মিলিয়ে আমাদের রপ্তানি বাজার এখন ৬০০ কোটি ডলারের বেশি।
অর্থসূচক: আপনাদের কী কী পণ্য রয়েছে এবং কোন কোন দেশে রপ্তানি হচ্ছে?
আব্দুল কাদের খান: আমরা গার্মেন্টস খাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই তাদের পণ্যই বেশি উৎপাদন করি। কাপড়, পলিব্যাগ, সেলাই সুতা, জিপার, হ্যাংগার, বিভিন্ন ধরনের লেভেল, বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ডটেক মিলিয়ে আমরা প্রায় ৩০ থেকে ৩২টি আইটেম উৎপাদন করি। ভিয়েতনাম, মায়ানমার এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের এক্সেসরিজ রপ্তানি হয়। এছাড়া মালয়েশিয়ায়ও আমাদের পণ্য যাচ্ছে। আরও অনেক দেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। এই মুহূর্তে আমাদের কিছু পণ্য সৌদি আরবে যাচ্ছে। আমরা এটাকে আরও প্রসার করতে চাই।
অর্থসূচক: আন্তর্জাতিক বাজারে এই শিল্পের সম্ভাবনা কতটুকু? এই শিল্পের রপ্তানি বাড়াতে আপনারা কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
আব্দুল কাদের খান: আমাদের সক্ষমতা অনেক বেশি। আরও অনেক দেশে রপ্তানি করার সুযোগ আমাদের আছে। তাই আমাদের এখন নতুন নতুন বাজার তৈরি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের বাইরে এখন পর্যন্ত এক্সেসরিজ যেটুকু যাচ্ছে তা খুবই সামান্য। সেটা ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। তবে ক্রমান্বয়ে এটা বাড়ছে। আমরা যদি এখন শুধু এক্সেসরিজ নিয়ে বিশ্ববাজারে যাই, আমরা ভালো কিছু অর্জন করতে পারবো। কেননা, আমাদের এক্সেসরিজ বিশ্বমানের।
রপ্তানির নতুন নতুন বাজার খুঁজতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। তবে আমাদের এই শিল্পকে বাইরের দেশগুলোতে আরও বেশি প্রদর্শন ও প্রচার করতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার। যেখানে আমাদের অবদান ৬০০ কোটি ডলারের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত্রীতে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি ৫ হাজার কোটিতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানিও ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি উন্নীত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। টেকনোলজি বাড়াতে হবে। এই ভিশনকে সামনে রেখে আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে।

অর্থসূচক: এই শিল্পের সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
আব্দুল কাদের খান: এই শিল্পে কমপ্লায়েন্স ইস্যু এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা এতদিন শুধুমাত্র গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন এক্সেসরিজেও কমপ্লায়েন্স চলে আসছে। পাশাপাশি ঢাকা শহরে যে ছোট ও মাঝারি শিল্প রয়েছে- সেগুলো এখন শহরের ভিতরে থাকতে পারছে না। আমরা সেগুলো শহরের বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কারখানা স্থানান্তর করতে গিয়ে আমরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছি। প্রথমে জমি নিতে হয়; জমির কাঠামো ঠিক করতে হয়; গ্যাস-বিদ্যুতের দরকার ইত্যাদি। তবে গ্যাস-বিদ্যুতের লজিস্টিক সাপোর্ট আমরা পাচ্ছি না।
বিসিক শিল্পনগরীতে এক্সেসরিজ ভিলেজ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যে সব অঞ্চল পছন্দ করতে বলা হয়েছে- তা অনেক দূরে। এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যাবে। আমরা গাজীপুর, সাভার এবং কেরাণীগঞ্জে জায়গা পছন্দ করেছি। এই মুহূর্তে কমপ্লায়েন্স করতে গিয়ে আমরা অনেক অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছি। এক্ষেত্রে আমাদের বড় ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। আমাদেরকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে যদি দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো, তাহলে আমাদের এই শিল্পগুলোতে কমপ্লায়েন্স করা সম্ভব হবে।

অন্য দিকে, বিদেশ থেকে আমাদের শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়ে অনেক সময় দামের তারতম্য দেখা দেয়। যেহেতু বন্ডেড ওয়্যারহাউজে কিছু নিয়ম-নীতি আছে। তাই ইচ্ছে করলেই অনেক কাঁচামাল একসঙ্গে আনা যায় না। আমাদের এককালীন ধারণক্ষমতা দেওয়া আছে। লাইসেন্সের ক্যাপাসিটি দেওয়া আছে। এ ধরনের কিছু নিয়ম-নীতি আছে। এ কারণে কখনো কখনো আমরা বাধাগ্রস্ত হই।

অর্থসূচক: চলতি মাসেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা আপনাদের শিল্পে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে?
আব্দুল কাদের খান: গ্যাসের দাম বৃদ্ধি আমাদের জন্য মরার উপর খারার ঘা। এমনিতে তো গ্যাস পাওয়াই যাচ্ছে না। তার উপর আবার দাম বৃদ্ধি। ব্যবসায়ী হিসেবে, এটা আমাদের জন্য সুখবর নয়। এই সেক্টরে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক জড়িত। এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সার্বিকভাবে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তথ্যসূত্র:অর্থসূচক ডটকম।

No comments:

Post a Comment