সিরামিক শিল্পে ক্যারিয়ার Ceramic career


তারিন তাসমী : বর্তমান সময়ে চাকরি পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া একই কথা। সবাই যদি গতানুগতিক দিকে হাত বাড়ায় তাহলে তো সেখানে প্রতিযোগিতা বাড়বেই। তাই গতানুগতিক দিকে হাত না বাড়িয়ে একটু ভিন্ন ধাঁচের দিকে গিয়ে দেখেন। এত এত প্রতিযোগিতায় হয়তো আপনি নাও টিকতে পারেন। এসব ফেলে মনে হবে আর কোনো কিছুর দিকে যাব না। কপালে যা থাকে থাক। এই চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আপনাকে। এগিয়ে যেতে হবে সামনে। নিজেকে আলাদাভাবে তৈরি করতে হবে। করতে হবে নতুন ভাবনা। আর এসব কিছু করতে সাহায্য করবে সিরামিক শিল্প। এখানে অন্য চাকরি থেকে আলাদা একটি পেশা। সারাক্ষণ নতুনত্ব রয়েছে এই পেশায়। বর্তমানে নতুনরা এই পেশার দিকে বেশি ঝুঁকছে। আপনি কেন পিছিয়ে থাকবেন? করতে পারেন নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ক্যারিয়ার সিরামিক শিল্পে।

কাজের ক্ষেত্র : সিরামিক বিষয়ে পড়ালেখা করে সাধারণত কোনো শিক্ষার্থীকে বসে থাকতে হয় না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীই কর্মে নিয়োজিত। আসলে সিরামিক কাজের চাহিদা ও ক্ষেত্র অনেক বড়। দেশে বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক সিরামিক কারখানা আছে। এসব শিল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করার সুযোগ রয়েছে। কাজের ভালো দক্ষতা দেখাতে পারলে দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া যায়। দেশের বাইরেও রয়েছে কাজ করার সুযোগ। সিরামিক প্রকৌশলীদের জন্য বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর) এবং বিএসটিআইতেও কাজ ও গবেষণা করার সুযোগ আছে।

কাজের ধরন : টাইলস, স্যানিটারি (কমোড, বেসিন) ও টেবিলওয়্যার (বাসনকোসন, ফুলদানি, সোপিস ইত্যাদি) এই তিনটি বিভাগ আছে সিরামিকে। তবে বিভাগ তিন ধরনের হলেও মূল কাজ একই রকম। এটি একটি সৃজনশীল পেশা। পণ্যের নকশা, কালার ম্যাচিং, গুণগত মান ঠিক আছে কিনা, তা দেখাই হচ্ছে সিরামিক প্রকৌশলীর মূল কাজ। এ ছাড়া একজন সিরামিক প্রকৌশলী তার সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিত্য নতুন সিরামিক পণ্যের ধারণা দিয়ে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।

ভালো করতে হলে : কাজটি যেহেতু সৃজনশীল, তাই এ কাজে মেধা ও মননের সঠিক ব্যবহার খুবই জরুরি। এতে কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। নতুন পণ্য তৈরিতে প্রকৌশলীকে বর্তমান যুগের চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে। একজন প্রকৌশলীকে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান যেন ভালো হয় সবসময় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। কাজের পরিবেশের সঙ্গে খাপ-খাইয়ে নিতে হবে। সিরামিক পণ্যতে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসতে হবে। নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসতে পারলে এই পেশায় দ্রুত খুব ভালো অবস্থান অর্জন করা সম্ভব হবে।

আয় : সৃজনশীল এই পেশায় পড়াশোনা চলাকালেও চাকরি করে আয়ের সুযোগ থাকে। চাকরির শুরুতেই ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেতন হলেও তা দ্রুত ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা কিংবা এরও বেশি হয়ে যেতে পারে। তবে পুরোটাই নির্ভর করবে একজন সিরামিক প্রকৌশলীর কাজের দক্ষতা, নিষ্ঠা এবং সৃজনশীলতার ওপর।

পড়াশোনার সুযোগ : দেশে সিরামিক নিয়ে পড়াশোনার জন্য সরকারি-বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যায়েই পড়ার সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসে চার বছর মেয়াদি সিরামিক টেকনোলজি ডিপ্লোমা কোর্স এবং দুই বছর মেয়াদি ট্রেড কোর্স চালু আছে। চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স আটটি সেমিস্টারে বিভক্ত। এই কোর্সে আসন সংখ্যা ৮০। দুই বছরের সিরামিক ট্রেড কোর্সে ছয় সপ্তাহ বরাদ্দ রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের জন্য। অন্যদিকে এসএসসি (ভোকেশনাল) সিরামিক ট্রেডে আসন সংখ্যা ৩০।

ভর্তির যোগ্যতা ও সময় : প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই সাধারণ ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এখানে ছেলেমেয়ে উভয়ই ভর্তির সুযোগ পায়। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর এসএসসি অথবা সমমান পরীক্ষায় সর্বনি¤œ জিপিএ-৩ সহ গণিতে জিপিএ-৩ থাকতে হবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী মেধাক্রমে ভর্তির সুযোগ পায়। এসএসসি ভোকেশনালের জন্য ১৫ ভাগ, মেয়েদের জন্য ১০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের জন্য ৬ ভাগ এবং ২ ভাগ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত।

যোগাযোগ : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস,  তেজগাঁও, ঢাকা-১২০৮। এ ছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও এই প্রতিষ্ঠান, কোর্স এবং ভর্তির সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে।


No comments:

Post a Comment